স্টাফ রিপোর্টার: ভরা মৌসুমেও কমেনি আলুর দাম। আলু কিনতে গেলে চোখে পানি এসে যাচ্ছে ক্রেতাদের। তারা বলছেন, এ সময় আলুর দাম আকাশছোঁয়া ভাবাই যায় না। দেশে উৎপাদিত এই সবজি ৭০—৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই দেশে আলুর জন্য বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ঢাকার প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন আলু আসলেই বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করে; কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম ঘটছে। মঙ্গলবার ফকিরাপুল বাজারে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, এখন আলুর মৌসুম। বাজারে আলুর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ৭০টাকার নিচে কোন আলু নেই। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখন আলু কিনে খাওয়া কঠিন । দিন দিন সবজি, মাছ ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে দু’বেলা পেটভরে খেয়ে বেঁচে থাকা খুব কঠিন হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিচং’র সময় বৃষ্টিতে দেশে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতের আলুর সরবরাহ কমে যায়। তারা মনে করেন, আমদানি বন্ধ হওয়ায় আলুর সরবরাহ আরও কমে গেছে। তাই ক্রেতাদের এখন তুলনামূলক বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত সোমবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি। গত মাসে আলুর খুচরা দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ। মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম এত বাড়তে দেখেনি বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, নতুন আলু বাজারে আসছে। আবার পুরাতন আলুর মজুদ থেকে গেছে। তবে আলুর দাম কমার লক্ষণ নাই, বরং বাড়ছে। গত বছর এই সময়ে তিনি ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছিলেন। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এদিকে আলু চাষিরা জানান, গত বছর প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭০—৮০ মণ আলু পাওয়া গেছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর বিঘাপ্রতি মাত্র ৪০—৪২ মণ আলু ঘরে উঠেছে। এ বছর আলুর উৎপাদন কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রতি কেজি আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ১৯ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১৯ সালে ২০ টাকা ৪৬ পয়সা ও ২০২০ সালে ১৯ টাকা ৫৮ পয়সা।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, গত ডিসেম্বরের আগেই হিমাগারে থাকা আলুর মজুদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে হিমাগার থেকে বাজারে আলু সরবরাহ করা হচ্ছে না। এবার ৯০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৮০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাই হিমাগারে আলু কম মজুদ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে হঠাৎ করেই আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ৩৫—৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সেই উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায় গত ৩০ অক্টোবর সরকার ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু আমদানির অনুমতি দেয়। বাজারে এর তেমন প্রভাব না পড়ায়, প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ টাকার নিচে নামেনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার তিন লাখ ৬০ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দিলেও এসেছে ৬০ হাজার টন। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আলুর উৎপাদন ৮৫ লাখ টনের বেশি হয়নি। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করেছিল আলুর উৎপাদন এক কোটি ১২ লাখ টন হবে। দেশের অন্যতম প্রধান আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম মিজানুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ বছর আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরবরাহ কম থাকায় মুন্সীগঞ্জে আলুর দাম অনেক বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম প্রায় দ্বিগুণ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মৌসুম শুরুর ঠিক আগে বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে নতুন আলু আসতে কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়েছে। এ কারণে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে। তবে আলু উৎপাদনে ঘাটতি নেই।
Leave a Reply